আমলকী খাওয়ার ১০টি উপকারিতা: রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা

আমলকী খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজকের এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো আমলকী খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।আমলকী তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এবং ভিটামিন সি এর পাশাপাশি আমলকি তে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। 

আমলকী খাওয়ার উপকারিতা

আমলকী তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারনে আমলকী কে ফলের রাজাও বলা হতো। আমলকী খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং মানসিক চাপ দূর হবে। তো চলুন জেনে আসি আমলকী খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। 

পোস্ট সূচীপত্রঃ আমলকী খাওয়ার উপকারিতা

আমলকী খাওয়ার উপকারিতা 

আপনারা অনেকেই জানেন না আমলকী খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। একটা আমলকি তে যে পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে তা লেবু এবং কমলার থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশী। এছাড়াও আমলকী বিভিন্ন রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও চিকিতসা ক্ষেত্রে আমলকী প্রচুর ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক আমলকী খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। 

ক্যানসার প্রতিরোধ করে আমলকী

আমলকী তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এবং এর পাশাপাশি রয়েছে ফ্লেভানয়েড নামে এক রকমের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের কোষ এর মধ্যে বিদ্যমান ফ্রি রেডিক্যাল গুলোকে নষ্ট হতে দেয় না যার ফলে এই ফ্রি রেডিক্যাল গুলো রক্ষা পায় যার ফলে শরীরে ক্যানসারের প্রবণতা অনেক কমে যায়। 

আর এইভাবে আমলকী আমাদের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। 

কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে আমলকী

 আমলকী তে যেমন রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এর পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় ফাইবার। আর এই ফাইবার উপস্থিত থাকার কারণে আমলকী আমাদের হজমের যেকোনো সমস্যা দূর করে । এবং এতে বিদ্যমান ফাইবার অস্ব বা পাইলস এর সমস্যা থেকেও  মুক্তি দেয়। এছাড়াও আপনি যদি নিয়মিত আমলকি  বা আমলকির রস খেতে পারেন,

তাহলে হৃদরোগ ও কোলেস্টেরলের এর মতো জটিল সমস্যা থেকেও মু্ক্তি পাবেন। আমলকী তে উপস্থিত প্রচুর ভিটামিন সি আমাদের মুখের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে হজমের সমস্যা দূর করে এবং নানারকমের জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এই মহৌষধ আমলকী। 

ডায়াবেটিসের সমস্যা কমায় আমলকী

আমলকী তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা হজমের সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান করতে পারে। এবং এই ফাইবার আমাদের গ্রহন করা খাদ্য কে ধীরে ধীরে হজম করায় যার ফলে খাদ্য হজম হওয়ার পর তা Glaxcose পরিণত হয়। এবং এই Glaxcose আমাদের শরীরে ধীরে ধীরে শক্তি প্রদান করে ফলে শরীরে এক অন্যরকম এনার্জি অনুভূত হয়।

যার ফলে রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমাণ সঠিক থাকে যা ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে। 

ওজন কমাতে সাহায্য করে আমলকী


আমলকী তে রয়েছে ফাইবার বা দ্রবন যা আমাদের গ্রহন করা খাদ্য ধীরে ধীরে হজম করে । এর কারণে আমাদের ক্ষুদা কম অনুভব হয় এবং ক্ষুদা দেরিতে লাগে। যার ফলে আমরা যদি কম খাবার ও গ্রহন করি তাহলে আমাদের তেমন ক্ষুদা অনুভব হবে না ।আর আমরা যদি কম খাবার গ্রহন করি তাহলে আমাদের ওজন কমতে শুরু করবে । 

আরো পড়ুনঃ 

লেবু যেমন ওজন কমাতে সাহায্য করে তেমনি আমলকী আরো বেশী ওজন কমাতে সাহায্য করে ।এজন্য যাদের ওজন কমানো উচিত তারা নিয়মিত আমলকী খেতে পারেন।  

হৃদরোগ বা স্ট্রোক এর ঝুঁকি কমায় আমলকী

আমরা যখন আমলকী খাই তখন তা আমাদের রক্তের জমাট বাধার প্রক্রিয়াকে বাধা দেয় যার ফলে রক্ত জমাট বাধতে পারে না । এবং রক্ত জমাট বাধতে না পারার কারণে হৃদরোগ বা স্ট্রোক এর ঝুঁকি কমে যায়। এজন্য যাদের হৃদরোগ বা স্ট্রোক এর সমস্যা আছে তারা যদি নিয়মিত আমলকী খেতে পারেন তাহলে এইসব জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

ব্যাথা নাশক হিসাবে কাজ করে আমলকী

আমাদের শরীরে অনেক কারণে যে ব্যথা অনুভব হয় তা নিমিষেই দূর করতে পারে এই মহৌষধ আমলকী । অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে যাদের শরীরে প্রচুর ব্যথা ছিল তারা আমলকী খাওয়ার কিছুক্ষণ এর মধ্যে ব্যথা থেকে মুক্তি পেয়েছে। এছাড়াও যাদের শরীরে ক্ষত রয়েছে তাদের ক্ষত দ্রুত শুকাতে কার্যকর এই আমলকী । 

কেনোনা এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা শরীরের ক্ষত দ্রুত শুকাতে পারে। এবং আমারা যদি নিয়মিত আমলকী খেয়ে থাকি তাহলে শরীরের ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। 

ত্বকের পরিচর্যায় ব্যাবহার করুন আমলকী

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং ত্বককে নরম,মসৃণ এবং সুন্দর করতে চাইলে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন আমলকী । আপনারা যদি নিয়মিত আমলকী ব্যবহার  করতে পারেন তাহলে বার্ধক্যজনিত বলিরেখা কমে যাবে। তাই ত্বকের উজ্জজলতা বৃদ্ধি বা ত্বককে সুন্দর করতে ব্যবহার করতে পারেন এই উপকারী আমলকী। এজন্য প্রতিদিন সকালে আমলকীর সাথে মধু মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন।

তাই ত্বককে সুন্দর করতে ত্বকের যেকোনো সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন আমলকী খেতে পারেন।

আমলকী খাওয়ার উপকারিতা


চুলের পরিচর্যায় ব্যাবহার করুন আমলকী

চুলের সমস্যা দূর করতে আমলকী খুবই কার্যকরি একটা উপাদান। এই আমলকী আমাদের চূলকে দ্রুত  বৃদ্ধি করতে পারে,নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে,চুলের অকাল পক্কতা রোধ করে,  এমনকি চুল ঝরে যাওয়ার সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয় । তাই আপনার যদি উপরের মধ্যে যেকোনো একটা সমস্যা দেখা দেয় বা থেকে থাকে তাহলে তা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত আমলকী ব্যবহার করুন।

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে আমলকী

আমলকী তে ভিটামিন সি এর পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ । যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং আমাদের চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে। ভিটামিন এ আমাদের চোখের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। আমলকী তে প্রচুর ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি থাকার কারণে আমলকী চোখের চুলকানি, চোখ দিয়ে জল পড়া ইত্যাদি সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয় ।

এজন্য চোখের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চোখ সুস্থ রাখতে এবং  দৃষ্টিশক্তি প্রখর রাখার জন্য খাদ্য তালিকায় আমলকি অবশ্যই যুক্ত  করুন ।

সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে লড়াই করে আমলকী

আমলকী তে রয়েছে লেবু এবং কমলা এর থেকে প্রায় ২০ গুণ ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরধ ক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। এজন্য আমরা যদি নিয়মিত আমলকী খেয়ে থাকি তাহলে আমরা বিভিন্ন ভাইরাল সংক্রমণ এর হাত থেকে রক্ষা পাবো। এজন্য আমরা যদি আমলকী খাওয়ার অভ্যাস করি তাহলে সর্দি-কাশির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবো। 

ভিটামিন সি এর ভান্ডার আমলকী

আমাদের শরীরে প্রতিদিন যে পরিমাণে ভিটামিন সি প্রয়োজন তা সম্পুর্ন আমরা পেতে পারি এই আমলকী থেকে কেনোনা এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি।  ভিটামিন সি এর সর্বোৎকৃষ্ঠ্য উৎস হচ্ছে আমলকী। আমরা যদি নিয়মিত আমলকী খাই তাহলে ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য উপকারী যৌগ পাওয়া যাবে । 

যার ফলে আমাদের ত্বকের যেকোনো সমস্যা দূর হবে ত্বক থাকবে সুস্থ,যেকোনো দাগ কমাবে, চুলের সমস্যা দূর হবে, চোখের সমস্যা থাকলে তাও দূর হবে,শরীরের ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করবে,চুলের জেল্লা বৃদ্ধি পায়, রুক্ষতা কমে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে, পেটের গোলযোগ দূর করবে এই আমলকী।

আমলকী কিভাবে খাবেন

আমলকী তে রয়েছে অসংখ্য পুষ্টি উপাদান। তাই এসব পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরে গ্রহন করা জরুরী। আমলকি আপনারা অনেকভাবে খেতে পারবেন তবে এর পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ পেতে হলে আমলকি কাচা বা রস করে খেতে হবে। আমলকী র স্বাদ হালকা মিষ্টি তেতো, ও টক্ তাই সবাই এটা কাচা খেতে পছন্দ করেন না। 

যারা আমলকী কাচা খেতে পারেন না তারা অন্যান্য সবজির সাথেও স্যালাড হিসাবে খেতে পারেন কিংবা যেকোনো সবজির সাথে রান্না করে খেতে পারেন তাছাড়াও এর আচার করে খেতে পা্রবেন আপনারা। এছাড়াও বাজারে আমলকীর তেল বা পাউডার, ক্যাপসুল পাওয়া যায়। তেল সাধারণত চুলের পরিচর্যা তে ব্যবহার করা হয় এবং ক্যাপসুল নানারকমের ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। 

আমলকী খাওয়ার উপকারিতা


আমলকী নিয়মিত খেলে যে যে উপকার পাবেন

  • ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত হবে
  • শরীরে কোলাজেন উৎপাদন করে
  • পিগমেন্টেশন এবং দাগ কমায়
  • আর্দ্রতা বজায় রাখে
  • প্রদাহ কমায়
  • অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ত্বক রাখে পরিষ্কার ও দাগমুক্ত
  • ক্ষত নিরাময় করে
  • ত্বক উজ্জ্বল করে
  • চোখের সমস্যা দূর করে
  • চূলকে বৃদ্ধি করে
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • মানসিক চাপ কমায়
  • পাইলসের সমস্যা দূর করে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
  • সর্দি-কাশি, পেটের পীড়া ও রক্তশূন্যতা দূর করে
  • ব্রঙ্কাইটিস ও এ্যাজমা দূর করে
  • ফুসফুসকে শক্তিশালী করে
  •  হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা দূর করে
  • মুখে রুচি ও স্বাদ বাড়ায়

লেখকের শেষকথাঃ আমলকী খাওয়ার উপকারিতা

আজকের এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমলকী খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। আমলকী খেলে কোন কোন সমস্যা দূর হয় কীভাবে আমলকী খাবেন বিস্তারিত সকল বিষয় আলোচনা করা হয়েছে আমলকী খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এই পোস্টে। আপনাদের যদি এই পোস্ট ভালো লাগে তাহলে কমেন্ট করুন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইউনিকমিস্ট্রির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন আমরা আপনাদের পজিটিভ কমেন্টের জন্য অপেক্ষা করছি

comment url