টাঙ্গুয়ার হাওর: স্বপ্নের মতো এক ভ্রমণের গল্প

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন কাহিনী টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন কাহিনী,কীভাবে যাবেন, খরচ কত হবে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আজকের পোস্ট টি আপনার জন্য। টাঙ্গুয়ার হাওর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। টাঙ্গুয়ার হাওর খুবই সুন্দর একটা জায়গা। যারা যারা নদী, সমুদ্র, কিংবা জলধারা পছন্দ করেন তাদের জন্য বেস্ট অপশন এই টাঙ্গুয়ার হাওর। 

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন কাহিনী, কীভাবে যাবেন, খরচ কত হবে বিস্তারিত

টাঙ্গুয়ার হাওর এ আপনারা যদি বর্ষাকালে ভ্রমন করেন তাহলে সবচেয়ে বেশী সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। টাঙ্গুয়ার হাওর এ আপনারা ঘুরতে গেলে নানারকমের মাছ, পাখির সমাগম দেখতে পারবেন। আপনারা যদি শিতের সময় টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমন করেন তাহলে প্রায় ২৫০ প্রজাতির পাখি দেখতে পারবেন। আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন কাহিনী, কীভাবে যাবেন, খরচ কত হবে বিস্তারিত সব। 

পেঁজ সূচীপত্র ঃ টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন কাহিনী

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন কাহিনী

টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। টাঙ্গুয়ার হাওড়ে আপনারা গেলে দেখতে পারবেন অথৈই পানি, জলাবণ, নীল নীল আকাশ, সবুজ প্রকৃতি। এসব জিনিসই টাঙ্গুয়ার হাওরকে অন্যরকম সৌন্দর্যে সাজিয়েছে। বর্ষাকালে টাঙ্গুয়ার হাওরের আয়তন বিশ হাজার একর হয়ে থাকে। বর্ষাকালে আপনি টাঙ্গুয়ার হাওড়ে গেলে যেদিকে তাকাবেন শুধু পানি আর পানি দেখতে পারবেন। 

টাঙ্গুয়ার হাওরের রয়েছে ১৩০ প্রজাতির মাছ, ১০ প্রজাতির ব্যাঙ, এবং প্রায় ১৫০ প্রজাতির বেশি সরীসৃপ দেখতে পারবেন। তাছাড়াও শীতকালে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে চারপাশে নানারকম পাখির দেখা মিলবে।এছাড়াও আপনারা টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে মেঘালয় পাহাড়গুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।ভারতের মেঘালয় থেকে প্রায় ২৫ টির মত ঝর্ণা টাঙ্গুয়ার হাওড়ে এসে মিশে গেছে। 

এছাড়াও টাঙ্গুয়ার হাওরের রয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার। ওয়াচ টাওয়ার থেকে আপনারা নানারকম সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়াও টাঙ্গুয়ার হাওরে রয়েছে ছোট বড় প্রায় ৪৫ টি ভাসমান গ্রাম বা দীপ। টাঙ্গুয়ার হাওর এর মতো সুন্দর জায়গা আর পৃথিবীর কোথাও নেই। বর্ষাকালে টাঙ্গুয়ার হাওর এর পানি বাড়তে থাকে এবং শীতকালে টাঙ্গুয়ার হাওর এর পানি কমতে শুরু করে। 

টাঙ্গুয়ার হাওর এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমনে কখন আসবেন কোন সময় আসবেন বিস্তারিত জেনে আসা লাগবে। 

টাঙ্গুয়ার হাওর কখন যাবেন

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের একদম পারফেক্ট সময়। বর্ষাকাল ছাড়া অন্যান্য যে কোন সময় টাঙ্গুয়ার হাওরের পানির পরিমাণ অনেক কম থাকে। তবে আপনি যদি টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্য সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করতে চান আপনাকে বর্ষাকালেই টাঙ্গুয়ার ভ্রমণ করতে হবে । 

শীতকালে আপনারা টাঙ্গুয়ার হাওরে গেলে নানারকম পাখি দেখতে পারবেন। শীতকালে অতিথি পাখি এসে টাঙ্গুয়ার হাওরে একত্রিত হয়। যার ফলে শীতকালে আপনি অনেক প্রজাতির পাখি দেখতে পারবেন এবং প্রকৃতির নানা রকম সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এজন্য টাঙ্গুয়ার ভ্রমণের সময় নির্ধারণে অবশ্যই বর্ষাকালকে প্রাধান্য দিবেন। 

হাওর ভ্রমণে কি কি দেখবেন

যারা প্রকৃতি ভালবাসে তাদের কাছে টাঙ্গুয়ার হাওর একটা দর্শনীয় স্থান। টাঙ্গুয়ার হাওরের সূর্যাস্ত একটা স্মৃতিময় অধ্যায় হবে আপনার জীবনে। সূর্যাস্ত দেখতে আপনার খুবই ভালো লাগবে এবং সারা জীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে আপনার জীবনে। এছাড়াও হাওর ভ্রমণের সাথে সোয়াম্প ফরেস্ট, ওয়াচ টাওয়ার, শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রি লেক), শিমুল বাগান, বারিক টিলা, যাদুকাটা নদী, লাউড়ের গড় সহ ঘুরে আসতে পারেন।

রাতের হাওড় আপনার মন, প্রান কে একদম শীতল করে দিবে। চাঁদনী রাতে হাওড়ের পাশে বসে বাতাস খাওয়ার ফিলিংস কাউকে কখনো মুখে বলে বুঝানো সম্ভব না। 

টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়ার উপায়


আপনারা দেশের সব জায়গা থেকে সুনামগঞ্জে বাসে করে আসতে পারবেন। আপনি যদি সুনামগঞ্জ থেকে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে যেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই সুনামগঞ্জ জেলা শহরে আসতে হবে। 

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ ঃ
আপনারা যদি বাসে করে ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ যেতে চান তাহলে ঢাকার সায়দাবাদ থেকে আপনারা মামুন ও শ্যামলী পরিবারের বাস পেয়ে যাবেন। এছাড়াও আপনারা মহাখালী থেকে এনা পরিবহনের বাস পেয়ে যাবেন সুনামগঞ্জ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য। এসব নন এসি বাসে আপনাদের ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকার মতো। আর ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগবে ৬ থেকে সাড়ে ছয় ঘণ্টার মতো।

সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ:
আপনারা সিলেট থেকে সরাসরি সুনামগঞ্জ পর্যন্ত আসতে পারবেন। এজন্য আপনাদের সিলেটের কুমারগাঁও বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে হবে। সেখান থেকে আপনারা সুনামগঞ্জ যাওয়ার জন্য লোকাল ও ডাইরেক বাস পেয়ে যাবেন। বাস গুলোর ভালো লাগবে একশ টাকার মতো। আর সময় লাগতে পারে দুই ঘন্টার মত। এছাড়া আপনারা যদি শাহজালাল মাজারের সামনে থেকে গাড়ি তে উঠেন তাহলে ২০০ টাকার মতো ভাড়া রাখতে পারে। 

সুনামগঞ্জ থেকে টাংগুয়াঃ
সুনামগঞ্জ থেকে আপনারা টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়ার জন্য লেগুনা/সিএনজি/বাইক পেয়ে যাবেন। সুনামগঞ্জ থেকে প্রথমে আপনাকে তাহেরপুর পর্যন্ত যেতে হবে। তারপর তাহেরপুরের নৌকা ঘাট থেকে আপনার পছন্দ অনুযায়ী নৌকা ভাড়া করে গন্তব্য শুরু করুন টাঙ্গুয়ার হাওরের উদ্দেশ্যে। শীতকালে পানি কমে যায় তাই আপনাকে লেগুনাবা বাইকে করে সোলেমানপুর পর্যন্ত যেতে হবে। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে টাঙ্গুয়ার উদ্দেশ্যে যেতে পারবেন। 

টাঙ্গুয়ার হাওর হাউজবোট ও নৌকা ভাড়া

টাঙ্গুয়ার হাওড়া গেলে আপনারা ঘুরে বেড়ানোর জন্য নানা মানের হাউজবোট, সেমি হাউজবোট কিংবা গতানুগতিক নৌকা পেয়ে যাবেন। এই হাউজবোট গুলতে আপনারা ঘোরার পাশাপাশি থাকতে ও পারবেন।প্যাকেজ এর উপরে ভিত্তি করে ভাড়া নানা রকমের হতে পারে। সাধারণত এই এক রাত থাকা তিন বেলার খাবার সহ 

হাওড়ের আশেপাশে স্পট ঘুরে দেখার জন্য ভালো মানের বোটগুলোতে খরচ হতে পারে ছয় হাজার থেকে দশ হাজার টাকার মত। আর আপনারা যদি মোটামুটি মানের বোর্ডগুলো যেতে চান তাহলে খরচ পড়বে ৪০০০ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে। তাছাড়া আপনার যদি পুরো হাউজবোড রিজার্ভ নিতে চান তাহলে খরচা হতে পারে ৪০০০০ থেকে ৮০০০০ টাকা। 

আপনারা এই হাউসবোট গুলোর প্যাকেজে মোটামুটি প্রয়োজনের সব জিনিস পেয়ে যাবেন। এজন্য কোন কিছু বুকিং করার আগে অবশ্যই দরদাম করে নিন। তাছাড়া আপনাদের বাজেট যদি কম হয়ে থাকে তাহলে আপনারা লোকাল বডির নৌকা ভাড়া করতে পারেন। তবে নৌকা ভাড়া করার আগে অবশ্যই নৌকায় বাথরুম আছে কিনা বিদ্যুৎ নাইটে ফ্যানের ব্যবস্থা আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিতে পারেন। 

আপনারা যখন ঘুরার জন্য নৌকা ভাড়া করবেন টার আগে দামাদামি করে নিতে ভুলবেন না।নৌকা যদি বড় হয়ে থাকে তাহলে নৌকা ভাড়া বেশী আসবে। নৌকা ছোট বা মাঝারি হলে ভাড়া মোটামুটি ধরনের হবে। আর কোন কোন জায়গা গুলো ঘুরে দেখবেন, রাতে ঘুরতে যাবেন নাকি দিনে এবং সিজন এর উপরে। ছোট নৌকা ভাড়া করতে ২৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা লাগে। 

আর আপনারা যদি মাঝারি ধরনের নৌকা ভাড়া করতে চান তাহলে ৩৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। আর যদি বড় নৌকা সারাদিনের জন্য ভাড়া করতে চান তাহলে দশ হাজার টাকা লাগতে পারে। আপনার যদি নৌকায় রাত্রি যাপন করতে চান তাহলে খরচা বৃদ্ধি পেতে পারে। রান্না করার জন্য নৌকার মাঝিকে খরচের টাকা দিলে মাঝি বাবুর্চির ব্যবস্থা করে দিবে। 

আপনাকে অবশ্যই একটি বিষয়ে মাথায় রাখতে হবে কোন কিছু ভাড়া করার আগে অবশ্যই দরদাম করে নিবেন তা না হলে নানা রকম জটিলতা করতে পারেন। কোথায় কোথায় ঘুরবেন রাতে থাকবেন কিনা থাকবেন সব বিষয় ক্লিয়ার করে ভাড়া নির্ধারণ করবেন। 
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন কাহিনী, কীভাবে যাবেন, খরচ কত হবে বিস্তারিত

কোথায় থাকবেন হাওরে গিয়ে 

অনেকেই চিন্তা করেন টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন কাহিনীতে গিয়ে কোথায় থাকবেন।পর্যটকেরা হাওড়ে ঘুরতে গেলে সাধারণত হাউজ হাউজবোটেই রাত কাটিয়ে দেন। আপনারা চাইলে টেকেরঘাট বাজারে রাতে থাকার জন্য জায়গা পেয়ে যাবেন। আবার যদি চান তাহলে সুনামগঞ্জের হোটেলগুলোতে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। 

তবে আপনারা টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে গেলে অবশ্যই এক রাত বা দুই রাত হাওরের নৌকায় থাকা উচিত। এই বিষয়টা আপনারা অনেক ইনজয় করবেন। আপনাদের অনেক ভালো লাগবে নৌকার মধ্যে রাত্রিযাপন করলে। এছাড়াও আপনারা খুব কম টাকায় হোটেল পেয়ে যাবেন। ৪০০-১০০০ টাকার মধ্যে থাকার জন্য হোটেল পেয়ে যাবেন। হাওরের মাঝকানে একটা একটা কটেজ আছে যার নাম হাওর বিলাস।

কি খাবেন টাঙ্গুয়ার হাওর গিয়ে

টাঙ্গুয়ার হাওর গিয়ে আপনারা যদি চান নিজেরা ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। সকালে তাহিরপুরের হোটেলে খাওয়া সেরে নিতে পারেন। নানারকম মাছ দিয়ে আপনারা খাওয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। ২০-২৫ প্রকারের মাছ খেতে পারবেন আপনারা। এছাড়া টেকেরঘাটে আপনারা খাওয়ার হোটেল পেয়ে যাবেন। 

আর আপনারা যদি রাতে থাকার পরিকল্পনা থাকে নৌকায় তাহলে যে কয়দিন থাকার প্লান করে্ছেন সেই কয়দিনের বাজার করে নিতে হবে। আর হাওরের মাঝখানের বাজার গুলতে আপনারা সব তাজা মাছ পেয়ে যাবেন। নানারকম তাজা মাছ দেখতে পারবেন এই টাঙ্গুয়ার হাওর এর মাঝখানের দোকান গুলোতে। 

টাঙ্গুয়ার হাওরের দর্শনীয় স্থান সমূহ

টাঙ্গুয়ার হাওরের আশেপাশে আপনারা ঘুরার জন্য অনেক জায়গা পাবেন। কোন কোন জায়গাগুলোতে আপনার অবশ্যই যাওয়া উচিত সেইসব জায়গা নিয়ে এখন আলোচনা করবো আমরা। এখন আমরা যেই জায়গাগুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা করবো টাঙ্গুয়ার হাওরের আশেপাশের এই জায়গাগুলো অনেক সুন্দর ও দর্শনীয় স্থান গুলো আপনার অনেক ভালো লাগবে তাই টাঙ্গুয়ার হাওরে গেলে এই জায়গাগুলো ঘুরে দেখার চেষ্টা করবেন। 

ট্যাকের হাট

ট্যাকের হাট বাংলাদেশ এবং ভারতের সীমান্তে অবস্থিত একটি বাজার। যেসব পর্যটকেরা টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন করতে আসেন তাদের বেশিরভাগ ট্যাকের হাট ঘুরতে আসেন। আপনারা ট্যাকের হাট জায়গাটি্তে কম দামে খাবার বা ভাজাপোড়া পেয়ে যাবেন। ট্যাকের ঘাট থেকে ৫-৬ মিনিটের দূরে অবস্থিত এই ট্যাকের হাট। যাদের বাজেট একটু কম তারা ট্যাকের হাট থেকে খাওয়া দাওয়া করতে পারবেন।

লাকমা ছড়া

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ আসলে অবশ্যই লাকমা ছড়া জায়গাটিতে যেতে বলবেন না। আপনারা লাকমা ছড়া এই জায়গাটিতে আসলে পাহাড়ের মাঝে মাঝে নানা ধরনের সবুজের আস্তরণ দেখতে পারবেন। এবং এই সবুজ জায়গাগুলোর মাঝখান দিয়ে একটি ঝর্ণা নেমে এসেছে ঝর্ণাটির নাম লাকমা। এ ঝরনাটি আপনারা বাংলাদেশ থেকে দেখতে পারবেন না কিন্তু পানিগুলো বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়ে আসে। 

এই ঝর্ণাটির পানিগুলো সোজা গিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে জমা হয়। এবং পানিগুলো যে জায়গা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে একত্রিত হয় তাকে বলা হয় লাকমা ছড়া। লাকমা ছড়ার শীতল জলগুলো আপনার মনকে শীতল করে দেবে। এবং লাকমা ছড়াতে রয়েছে বড় বড় অনেকগুলো পাথর যা এর সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করেছে কয়েক গুণ। ট্যাকের ঘাট থেকে আপনারা আপনারা খুব সহজেই অটো বা মোটরসাইকেল পেয়ে যাবেন লাকমা ছড়ার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। 

ওয়াচ টাওয়ার

হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনাকে ওয়াচ টাওয়ারে উঠতে হবে অবশ্যই। এখানকার পানি খুব পরিষ্কার হয়ে থাকে। তাই বেশিরভাগ পর্যটকেরা এখানে গোসল করে থাকেন। এছাড়াও আপনারা এখানে পানিতে গোসল করতে করতে চা খাওয়ার সুযোগ পাবেন। এখানকার স্থানীয় লোকেরা চা, বিস্কুট বিক্রি করেন নৌকায় করে। 

সিজনের সময়গুলোতে বা ছুটির দিনে এই ওয়াচ টাওয়ারে অনেক ভীড় থাকে। এই ওয়াচ টাওয়ার টি অবস্থিত বলাই নদীর পাশে। আপনারা চাইলে এই জায়গায় ছোটো ছোটো নৌকায় ঘুরতে পারবেন এবং এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। আপনারা ওয়াচ টাওয়ারের উপরে উঠে হাওরের পানির নিচের তলা পর্যন্ত দেখতে পারবেন । 

নীলাদ্রি লেক

পাথর কুয়ারি নামে পরিচিত এই নীলাদ্রি লেক। এইখানে আপনারা অনেক সুন্দর সময় কাটাতে পারবেন। এই লেক এবং এর আশেপাশের জায়গা অনেক সুন্দর। শহীদ সিরাজী লেক বলা হয় এখন এই নীলাদ্রি লেককে। আপনারা এই নীলাদ্রি লেকে নৌকায় করে ঘুরে ঘুরে নানারকম সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারবেন। এই লেকে আপনাদের জন্য আরো রয়েছে কায়াকিং এর বিশেষ ব্যাবস্থা। 

এই নীলাদ্রি লেকের পানি অনেক স্বছ তাই আপনারা এই লেকের পরিষ্কার পানিতে গোসল করতে পারবেন মন ফ্রেশ করার জন্য। এই নীলাদ্রি লেকের এক পাশে রয়েছে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি টিলা সবুজ চাদরে ঘেরা। এবং এর অন্যপাশে রয়েছে সুউচ্চ সুবিশাল পাহাড়। এই জায়গা আপনার মনকে ভালো করবে অবশ্যই। এই জায়গাটি ট্রাকের হাট থেকে খুব  কাছে অবস্থিত। 

জাদুকাটা নদী

এই জাদুকাটা নদী অনেক সুন্দর এক নদী। আপনারা এইখানে গেলে নানারকম সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। ভারতের জৈন্তিয়া পাহাড় এ এই নদীর অবস্থান। এই নদির পানি অনেক ঠান্ডা হয়ে থাকে। আপনারা এই জাদু্কাটা নদিতে গেলে অবশ্যই গোসল করে নিবেন। এই নদীর পাশে রয়েছে এক বিশাল পাহাড় আকাশের নীল মেঘ এবং জাদুকাটা নদীর পরিষ্কার পানি আপনার মনকে বিমোহিত করবেই। 

শিমুল বাগান

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান এই টাঙ্গুয়ার হাওর এর শিমুল বাগান। এই বাগানে আপনাদের প্রবেশ করার জন্য ২০ টাকা দিয়ে টিকেট কাট্তে হবে। এই বাগানে প্রায় ৩০০০ শিমুলের গাছ রয়েছে। এই বাগানের অপর পাশে রয়েছে মেঘালয়ের সুবিশাল পাহাড় এবং মাঝখানে রয়েছে স্বছ জলের জাদুকাটা নদী। আপনারা এই বাগানে আসতে চাইলে নৌকা ওয়ালাকে বললেই নিয়ে আসবে আপনাকে।

উপরের আপনাদের সাথে আলোচনা করা হলো টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন কাহিনীতে গিয়ে কোন কোন জায়গা অবশ্যই ঘুরবেন। এসব জায়গা না ঘুরলে আপনার ভ্রমন পরিপূর্ণ হবে না। 

টাঙ্গুয়ার হাওর ২ দিনের ট্যুর প্লান

আপনার সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো দিন চলে আসুন সুনামগঞ্জে। সুনামগঞ্জে সকালের খাওয়া দাওয়া করে নিয়ে তাহিরপুরের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়ুন। সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে ১-১,৩০ ঘন্টা। তারপরে তাহিরপুর বাজার থেকে আপনারা যে কয়দিন থাকবেন সেই কয়দিনের বাজার বা প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে নিন। 

আপনারা সকাল ৮-৯ টার মধ্যে নৌকা যাত্রা শুরু করার চেষ্টা করুন। তারপর আপনারা নৌকা নিয়ে চলে আসুন ওয়াচ টাওয়ার ঘুরার উদ্দেশ্য। তখন আপনারা এইখানে ছোট ছোট বাচ্চাদের নৌকা নিয়ে ঘুরতে দেখবেন এবং জলাবনের নানারকম সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। ওয়াচ টাওয়ার ভালোভাবে ঘুরা শেষ হলে বেড়িয়ে পরুন হাওরের মাঝখানে। 

হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করা শেষ হলে বেড়িয়ে পরুন টেকেরঘাটের উদ্দেশ্যে। আপনার নৌকা যতই এগিয়ে যাবে পাহাড় গুলো কাছে আসতে শুরু করবে। সেই দৃশ্য গুলো আপনার মনে সৃতি হয়ে থাকবে। আপনারা প্রথমে ওয়াচ টাওয়ারে গোসল না করে টেকেরঘাটের নীলাদ্রি লেকে গোসল করতে পারেন। আর আপনারা এই নীলাদ্রি লেকে রাত্রিযাপন করতে পারবেন নৌকার ভেতরে। 

তারপরের দিন সকালে আপনারা শিমুল বাগান, যাদুকাটা নদী ও বারিক্কাটিলা দেখতে রওনা দিতে পারেন। আপনারা বর্ষার সময় এই সকল জায়গায় নৌকা নিতে যেতে পারবেন কিন্তু পানি কমে গেলে মটরসাইকেল নিয়ে যেতে হবে। শিমুল বাগান, যাদুকাটা নদী ও বারিক্কাটিলা দেখা শেষ হয়ে গেলে দুপুরে টেকেরঘাট এর উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরুন। 

তারপরে আরেকটু সময় হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করে সন্ধার দিকে তাঁহিরপুরের উদ্দেশ্য রওনা দিবেন ।তাহিরপুর  থেকে যেকোন যানবাহনে করে সুনামগঞ্জে চলে আসুন এবং সেখান থেকে আপনারা বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিন। টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন কাহিনী আপনার জীবনে এক স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে। 
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন কাহিনী, কীভাবে যাবেন, খরচ কত হবে বিস্তারিত


টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন কাহিনী সতর্কতা ও কিছু পরামর্শ

  • টাংগুয়ার হাওর ভ্রমনের সময় অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নিতে হবে। 
  • কোনো কিছু করার আগে দামাদামি করে নিতে ভুলবেন না 
  • গ্রুপ করে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে খরচা কম হবে
  • ১০-১৫ জনের গ্রুপ করে যাওয়ার চেষ্টা করুন
  • বর্জপাত হলে নৌকার ছৈয়ের নিচে আশ্রয় নিন
  • খাবারের প্যাকেট হাওরের পানিতে ফেলবেন না 
  • শব্দ সৃষ্টিকারী মাইক পরিহার করুন
  • রাতের বেলায় উজ্জ্বল আলো উৎপন্ন করবেন না।
  • কোনো পাখি ধরার চেষ্টা করবেন না 
  • ছাতা নিতে পারেন তা আপনার কাজে আসবে
  • কোনভাবেই কোনো প্রাণীর ক্ষতি করবেন না 

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে সাথে নিন

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন কাহিনীতে আপনাদের ভ্রমনের সুবিধার জন্য টর্চ ব্যাকআপ ব্যাটারি,পাওয়ার ব্যাংক, ক্যাম্পিং মগ, চাদর, রেইনকোর্ট,এছাড়াও বড় আকারের পলিথিন, প্লাস্টিকের স্যান্ডেল ইত্যাদি এবং সানগ্লাস, ক্যাপ বা হ্যাট, গামছা খাবার পানি ইত্যাদি করে নিতে পারেন। কারণ হাওড়ে প্রচুর বৃষ্টি হয়ে থাকে তাই এসব সাথে নিতে ভুলবেন না। 

শেষকথাঃ টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন কাহিনী

আজকের এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন কাহিনী সম্পর্কে। টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন এ গিয়ে কোথায় থাকবেন কি খাবেন সকল কিছু আলোচনা করা হয়েছে এই পোস্টে। তাই আপনারা এই পোস্ট পড়ে উপকার পেলে কমেন্ট করুন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইউনিকমিস্ট্রির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন আমরা আপনাদের পজিটিভ কমেন্টের জন্য অপেক্ষা করছি

comment url