পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ভ্রমণ কাহিনী কীভাবে যাবেন বিস্তারিত সব

কুয়ালালামপুর ভ্রমন কাহিনী 

আপনারা কি পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ভ্রমন কাহিনী সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজকের এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ভ্রমন কাহিনী সম্পর্কে। পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার মালয়েশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার। এই টাওয়ার আবার অনেকের কাছে পেট্রোনাস টাওয়ার নামে পরিচিত। 

পেট্রোনাস টুইন -টাওয়ার ভ্রমন

তো চলুন জেনে নেওয়া যাক এই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ভ্রমন কাহিনী সম্পর্কে। আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো যে কীভাবে ঘুরবেন এই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, কীভাবে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া পর্যন্ত যাবেন, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার এ গেলে খরচ কতো হতে পারে এবং বিস্তারিত সবকিছু পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ভ্রমন কাহিনী সম্পর্কে। 

পেইজ সুচিপত্রঃ পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ভ্রমন কাহিনী 

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ভ্রমন কাহিনী

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারকে মালয়েশিয়ার সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার। এই টাওয়ার আবার পেট্রোনাস টাওয়ার নামেও পরিচিত। ওই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার অবস্থিত কুয়ালালামপুরের জালান আমপাং এ। পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ৮৮ তালা বিশিষ্ট এবং এই টাওয়ার কুয়ালালামপুরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। এই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার যেখানে অবস্থিত তার নাম কে এল সি। 

১৯৯৩ সালে এই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার এর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এই টাওয়ারের উচ্চতা ১৪৮৩ ফুট (৪৫২ মি.) এছাড়াও এই বিশাল টাওয়ার টি ডিজাইন করেছেন এক আর্জেন্টাইন-আমেরিকান স্থপতি মিজার পেলি্ল। এই সুবিশাল টাওয়ার নির্মাণ করতে খরচা হয়েছে ১.৬ বিলিয়ন ডলার। এই টাওয়ার বাইরে থেকে দেখতে কাচের মতো হলেও এটা সম্পূর্ণ নির্মাণ করা হয়েছে স্টিল ও পাথর দিয়ে।

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারে কিভাবে যাবেন

এই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার মালয়েশিয়ার প্রানকেন্দ্র কুয়ালালামপুরে অবস্থিত। তাই আপনারা যদি সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার দেখতে চান তাহলে আপনাকে আসতে হবে মালয়েশিয়া। আপনারা ঢাকা থেকে সরাসরি মালয়েশিয়া পর্যন্ত আসার জন্য অনেক ফ্লাইট পেয়ে যাবেন। তার মধ্যে এয়ার এশিয়া, বাংলাদেশ বিমান, ইউনাইটেড এয়ার ফ্লাইট অন্যতম। 

এছারাও মালয়েশিয়া পর্যন্ত যাওয়ার জন্য আপনারা আরো পাবেন ইউ এস বাংলা, রিজেন্ট এয়ার ওয়েজ, ও মালয়েশিয়ান এয়ার লাইন্সেসের সরাসরি ফ্লাইট। আপনাদের ঢাকা থেকে মালয়েশিয়া পর্যন্ত যাওয়ার জন্য সময় লাগবে ৩-৪ ঘন্টা। আবার মালয়েশিয়া বিমানবন্দর থেকে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ৫৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তাই সেখানে যাওয়ার জন্য বাস অথবা ক্যাবে  করে যেতে পারবেন। 

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার কীভাবে সম্পূর্ণ ঘুরবেন

প্রতিদিন এই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার দেখার জন্য হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসেন। এই টাওয়ার কে বলা হয় কুয়ালালামপুর শহরের প্রতীক। এই টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে পাথর এবং স্টিল দিয়ে। এবং এই টুইন টাওয়ার নির্মাণ করার সময় ইসলাম ধর্মের আর্টের মোটিফের সাথে মিলে আর্ট এর কাজ করা হয়েছে। এখানে প্রতেকদিন টুরিস্ট রা ঘুরার জন্য আসেন। 

এছাড়াও আপনাদের ঘুরার সুবিধার কথা চিন্তা করে এই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার সম্পূর্ণ ঘুরে শেষ করার জন্য রয়েছে টুরিস্ট গাইড এর বিশেষ ব্যবস্থা। এই টাওয়ার এমন সুন্দর ভাবে গোছানো যাতে টুরিস্টেরা এটা দেখে পছন্দ করেন। এছাড়াও পর্যটকরা স্কাই ব্রিজ এবং অবজারভেশন ডেক এবং কফি শপ ঘুরে দেখত পারবেন। 

আপনার যদি পেট্রোরস টুইন টাওয়ার এর ভেতরে প্রবেশ করতে চান তাহলে আপনাদের টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকতে হবে। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য টিকেট মূল্য ১৬৩৫ টাকা এবং বাচ্চাদের জন্য টিকেট মূল্য ৬৭৫ টাকা। আপনারা এই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার এ সকাল ৮-৩০ মিনিট থেকে টিকেট কিনতে পারবেন। 

এই পেট্রোরস টুইন টাওয়ার রয়েছে পুরো টাওয়ার ঘুরে দেখার জন্য অনেকজন টুরিস্ট গাইড। যাতে আপনারা খুব সহজে পুরো পেট্রোল টুইন টাওয়ার ঘুরে দেখতে পারেন। এই টাওয়ারে রয়েছে দেখার মত স্কাই ব্রিজ যা টাওয়ারের বেজ থেকে ১৭০মিটার উপরে অবস্থিত। এবং টুইন টাওয়ারের স্কাই ব্রিজটি অবস্থিত টাওয়ারের ৪১ তম তলায়। 
পেট্রোনাস টুইন- টাওয়ার ভ্রমন

এই স্কাই ব্রিজ দিয়ে আপনারা দুই টাওয়ার ঘুরে দেখতে পারবেন। এই স্কাই ব্রিজ এ ছবি তোলা এবং চার পাশের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আপনাদের ১৫ মিনিট অবস্থান করার সময় দেয়া হবে। 15 মিনিটের বেশি স্কাই ব্রিজ এর অবস্থান করতে না দেওয়ার কারণ হচ্ছে এখানে প্রচুর পর্যটক আসে আপনারা যদি এখানে বেশি সময় অবস্থান করেন তাহলে---

অন্যান্য টুরিস্টদের সমস্যা হবে এবং অনেক ভিড় জমে যাবে। তাই এখানে ভীড় এড়ানোর জন্য ১৫ মিনিট পর পর এখানে প্রবেশ করার টিকেট ইস্যু করা হয়ে থাকে। স্কাই ব্রিজ সম্পূর্ণ ঘুরে দেখানোর পর টুরিস্ট গাইড আপনাকে নিয়ে যাবে অবজারভেশন ডেকে যা টাওয়ারের ৮৮ তলায় অবস্থিত। টাওয়ারের অবজারভেশন ডেকে আপনারা ২০ মিনিটের মত অবস্থান করতে পারবেন। 

অবজারভেশন টেক থেকে আপনারা ৩৬০° এঙ্গেলে পুরো কুয়ালালামপুর শহরের সৌন্দর্য দেখতে পারবেন। অবজারভেশন ডেক দেখা শেষ হওয়ার পর আপনাদের নিয়ে আসা হবে নিচের গাউন্ড ফ্লোরে যেখানে রয়েছে একটি গিফট শপ। আপনারা চাইলে এই গিফট শপ থেকে কেনাকাটা করতে পারবেন। পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার সম্পূর্ণ ঘুরে দেখার জন্য সময় লাগবে ৪৫ মিনিট। 

আপনারা যদি পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার এর সম্পূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাহলে আপনাদের টাওয়ার দেখতে যেতে হবে সন্ধ্যার পরে। সন্ধ্যার পরে গেলে টাওয়ারের সৌন্দর্য সাথে আলোক ঝর্ণার বর্ণিল দৃশ্য দেখতে পারবেন। তাই টুইন টাওয়ার ভ্রমনে গেলে চেষ্টা করবেন সন্ধ্যা সাতটা থেকে নয়টার মধ্যে টাওয়ার ভ্রমন করার। 

এছাড়াও টাওয়ারের নিচে রয়েছে সুরিয়া কেএলসিসি শপিং কমপ্লেক্স। আপনারা চাইলে এখান থেকে ইচ্ছামত শপিং করতে পারেন আবার মুভিও দেখতে পারেন। এবং পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের নিচেই রয়েছে অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট আপনারা চাইলে সেখান থেকে খেতে পারেন মজাদার সব সুস্বাদু খাবার। পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ভ্রমন কাহিনী-----

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার খরচ ও সময়সূচী

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার এ প্রবেশ করতে চাইলে আপনাদের টিকেট কেটে প্রবেশ করতে হবে। এখানে প্রবেশের টিকেট মূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১৬৩৫ টাকা। এবং বাচ্চাদের টিকেট মূল্য হচ্ছে 675 টাকা।এই টুইন টাওয়ার খোলা থাকে সকাল নয়টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত। তবে লাঞ্চ এবং নামাজের বিরতি দেওয়া হয় দুপুর একটা থেকে দুইটা ত্রিশ পর্যন্ত। 

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার সপ্তাহে ছয় দিন খোলা থাকে এবং সোমবারে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার বন্ধ রাখা হয়। এই টাওয়ারের টিকিটের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা তাই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ভ্রমণের আগে চেষ্টা করবেন অনলাইনে অথবা অফলাইনে টিকিট কেটে রাখার জন্য। এই টাওয়ার সম্পূর্ণ ঘুরে দেখার জন্য আর কোনো টাকা লাগবে না সব টিকিটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। 

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ভ্রমনে গিয়ে কোথায় থাকবেন

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ভ্রমণে গেলে কুয়ালালামপুর শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল পেয়ে যাবেন যেগুলোতে আপনারা ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। এছাড়াও কুয়ালালামপুরে এমন কিছু হোটেল রয়েছে যেগুলো পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার থেকে ১৫ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত। হোটেল গুলো হচ্ছে----

হোটেল মায়া কুয়ালালামপুর,প্যাসিফিক রিজেন্সি হোটেল স্যুটস, বিন্তাং ওয়ারিসান হোটেল, মেলিয়া কুয়ালালামপুর, কনকর্ড হোটেল,ফুরামা বুকিট বিন্তাং এবং কার্ডোগান হোটেল এই হোটেলগুলোতে আপনারা খুব কম টাকার মধ্যে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। এছাড়াও কুয়ালালামপুরে রয়েছে বেশ কিছু  স্টুডিও এপার্টমেন্ট  যেগুলোতে অনেক কম টাকায় অনেকজন থাকতে পারবেন। 

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার এ গিয়ে কি খাবেন

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার এ গিয়ে কি খাবেন অনেকেই জানতে চান। আপনারা এই শহরে সব ধরনের খাবার পাবেন। এইখানে বিশ্বের প্রত্যেক জায়গা থেকে নিয়মিত পর্যটক আসা-যাওয়া করে যার কারণে এখানে প্রায় সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়। এইখানে খাবারের জন্য রয়েছে অনেক রেস্টুরেন্ট যেখানে আপনারা পেয়ে যাবেন বাঙালী, চাইনিজ, ভারতীয় খাবার সহ আরো অনেক প্রকার খাবার। 

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার থেকে ১০ মিনিট দূরত্বে অবস্থিত হোটেল হচ্ছে  হেয়ালি ম্যাক, ইরিস পাব। আর এইসব রেস্টুরেন্ট আপনারা পাবেন নাসি গোরেং, চানা রুটি ও নানা ধরনের স্ট্রীট ফুড যা খেতে অনেক মজাদার এবং সুস্বাদু।  পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ভ্রমনে গেলে অবশ্যই এই খাবার টেস্ট করতে ভুলবেন না। 
পেট্রোনাস টুইন- টাওয়ার ভ্রমন

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার উচ্চতা কত?

এই টাওয়ার একসময় বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার ছিল । এটা মালয়েশিয়ার সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার তবে আমরা অনেকেই জানি না এই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার এর উচ্চতা কত? তো চলুন জেনে আসি এই টাওয়ারের উচ্চতা কত

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার উচ্চতা হচ্ছে ৮৮ তালা যা যা 451.9 ফুট (841 মিটার)। 

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ভ্রমন কাহিনী টিপস

  • এখানে ঘুরতে গেলে সন্ধার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করবেন
  • পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ঘুরতে গেলে হাতে কিছু সময় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন যাতে পুড়ো মালয়েশিয়া ঘুরে দেখতে পারেন
  • যদি এই টাওয়ারের মতো আরো উঁচু টাওয়ার ভ্রমন করতে চান তাহলে মেনারা কুয়ালালামপুর টাওয়ারেও ঘুরে আসতে পারেন
  • অফলাইনের টিকেট কাটতে হলে ৬ সকাল ৬ টার সময় গেলে অনেক ভালো হবে কারণ টিকিটের সংখ্যা নির্দিষ্ট হবার কারণে অনেকেই আগে থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে
  • টুইন টাওয়ার দেখতে আসার সময় পাসপোর্ট নিয়ে আসতে ভুলবেন না। চেক ইন করার সময় পাসপোর্ট প্রয়োজন হয়
  • আপনি যদি একা ঘুরতে যান তাহলে ঘুরতে যাবার সময় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন এবং আপনার সাথে কয়েকজন থাকলে উবার বা ক্যাব ব্যবহার করুন খরচা কমানোর জন্য
  • কম দামে শপিং করার জন্য ফ্যামিলি বান্ডেল শপ ঘুরে আসতে পারেন এইখানে অনেক কম দামে শপিং করতে পারবেন

লেখকের শেষকথা

প্রিয় বন্ধুরা আজকের এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ভ্রমন কাহিনী সম্পর্কে। আলোচনা করেছি কিভাবে ঘুরবেন পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার সেখানে কোন সময় যাওয়া ভালো হবে তারপর কুয়ালালামপুর গিয়ে কোথায় থাকবেন কি খাবেন বিস্তারিত সব। পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ভ্রমন সম্পর্কে কোন কিছু বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইউনিকমিস্ট্রির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন আমরা আপনাদের পজিটিভ কমেন্টের জন্য অপেক্ষা করছি

comment url