তুলসী পাতার ১০টি অজানা উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

আপনারা কি তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তুলসী গাছের প্রতিটা অংশ বিশেষ করে তুলসী পাতা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। এছাড়াও তুলসী পাতা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
তুলসী পাতার -উপকারিতা

আজকের এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত সকল বিষয় আলোচনা করবো তুলসী পাতার নানারকম উপকারিতা সম্পর্কে। আমরা জানি যে তুলসী আমাদের ঠান্ডাজনিত রোগ সারাতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কিন্তু তুলসীর রয়েছে আরো অনেক উপকারিতা এবং গুণাগুণ যা আমরা অনেকেই সঠিক জানি না। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক তুলসী পাতার উপকারিতাগুলো সম্পর্কে। 

পেইজ সূচীপত্রঃ তুলসী পাতার উপকারিতা 

তুলসী পাতার উপকারিতা 

তুলসী পাতার উপকারিতা অনেক। তুলসী পাতা আমাদের অনেক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে এবং আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও তুলসী পাতা আমাদের ডায়াবেটিকস,কান্সার, রক্ত পরিষ্কার, আমাদের অতিরিক্ত স্টেট কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও নিয়মিত তুলসী পাতা খেলে ----

মাথা ব্যাথা কমাতে সাহয্য করে, আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং আরো অনেক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে আমাদের তুলসী পাতা। 

তুলসী পাতা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে

তুলসী পাতা নিয়মিত খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে শুরু করে। এবং সেই সাথে তুলসী পাতা ইনসুলিন এর কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে। তাই আমরা যদি নিয়মিত তুলসী পাতা খেতে পারি তাহলে আমাদের শরীরে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।তাই ডায়াবেটিসের সমস্যা দূর করতে নিয়মিত তুলসী পাতা খেতে পারেন। 

নিয়মিত তুলসী পাতা সেবন করার ফলে আমাদের লিভার এবং কিডনিকে মেটাবলিক ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত সেবন করুন তুলসী পাতা। 

তুলসী পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে

তুলসী পাতায় রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট উপাদান। যা আমাদের শরীরে কোনভাবেই ক্যান্সার সেল জন্ম নিতে পারে না। যার ফলে তুলসী পাতা নিয়মিত খাওয়ার ফলে ক্যান্সার রোগ আমাদের কাছে ঘেষতে পারে না। অনেক গবেষণা দেখা গেছে, নিয়মিত তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে আমাদের লিভার ওরাল এবং স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। 

এজন্য মারাত্মক ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে তুলসী পাতা নিয়মিত খেতে পারেন। এছাড়াও তুলসী পাতাতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট যা মিলে আমাদের শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

তুলসী পাতার উপকারিতা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে

তুলসী পাতাতে রয়েছে অসংখ্য উপকারী গুনাগুন যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে থাকে। আমরা যখন তুলসী পাতা খায় তখন কর্টিসল হরমোনের এর মাত্রা কমতে শুরু করে।যার ফলে আমাদের শরীর থেকে স্ট্রেস কমতে শুরু করে।এই স্ট্রেস কমার কারণ হচ্ছে কর্টিসল হরমোনের এর সঙ্গে স্ট্রেস এর সম্পর্ক।

এছাড়াও তুলসী পাতা আমাদের মানসিক চাপ এবং ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। আপনারা যখন কোনরকম ডিপ্রেশন অথবা মানসিক চাপে থাকবেন তখন তুলসী পাতা খাবেন। তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে সঙ্গে সঙ্গে আপনার মানসিক চাপ দূর হয়ে যাবে। 

তুলসী পাতা মাথা ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে

তুলসী পাতাতে রয়েছে সিলেটি ভ এবং ডিসইনফেক্টেন্ট পদার্থ। যা মানব দেহের মাথাব্যথা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আপনি যদি মাথা ব্যথার সমস্যায় বেশি পড়ে থাকেন তাহলে মাথা যন্ত্রণা করার সাথে সাথে কয়েকটি তুলসী পাতা চিবুতে পারেন। তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে খুব দ্রুত মাথা সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। 

তুলসী পাতা দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে সাহায্য করে

তুলসী অনেক উপকারী একটা গাছ। তুলসী পাতা আমাদের মানব দেহের অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তুলসী পাতা যেমন আমাদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে তেমনি আমাদের দৃষ্টি শক্তির বৃদ্ধি করতে তুলসী পাতা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তুলসী পাতা আমাদের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি চোখের ছানি পরা এবং---

চোখের বিভিন্ন রোগকে দূরে রাখে। তাই চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে নিয়মিত তুলসী পাতা খেতে পারেন। 

তুলসী পাতা সর্দি–জ্বরের হাত থেকে রক্ষা করে

তুলসী পাতা সর্দি–জ্বরের হাত থেকে রক্ষা করে। প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক বলা হয় তুলসী পাতাকে। কারণ এই তুলসী পাতায় রয়েছে অসংখ্য ঔষধি গুনাগুন। আমাদের সর্দি জ্বরের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রাকৃতিক ভাবে তুলসী পাতা খুবই কার্যকরী। সর্দি জ্বরের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে তুলসী পাতার কোনো বিকল্প নেই। আমরা যখন সর্দি জ্বর সারাতে তুলসী পাতা খাই তখন তুলসীর উপাদান ----

আমাদের শরীরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে যেসব ভাইরাসের জন্য রোগ হয়েছে সেসব ভাইরাস মরতে শুরু করে। যার ফলে আমাদের শরীর আস্তে আস্তে চাঙ্গা হতে শুরু করে। তাই সর্দি জ্বর থেকে রক্ষা পেতে তুলসী পাতা সেবন করতে পারেন না। সর্দি জ্বরের ক্ষেত্রে তুলসী্র কোন বিকল্প হয় না। এছাড়াও তুলসী পাতায় রয়েছে অসংখ্য ওষধি গুণাগুণ। 
তুলসী পাতার- উপকারিতা

তুলসীপাতা ব্রনের সমস্যা দূর করে

তুলসী পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল। তাই আমরা তুলসী পাতা সেবন করার সাথে সাথে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুগুলো মারা যেতে শুরু করে। যার ফলে যেসব ভাইরাসের কারণে ব্রণের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সেসব সমস্যা দূর হতে থাকে।ফলে খুব অল্প সময়েই মুখের ব্রণ এর সমস্যা দূর হয়ে যায়। 

তাই আপনারা ব্রনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তুলসি পাতা খাওয়ার পাশাপাশি পেস্ট হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। এতে খুব দ্রুত মুক্তি পাবেন ব্রনের সমস্যা থেকে। 

তুলসী পাতা রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে

তুলসী পাতাতে রয়েছে এমন কিছু ঔষধি উপাদান যা আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার করা পাশাপাশি রক্তের মধ্যে কোন রকম সমস্যা থাকলে তা দূর করতে সাহায্য করে। তাই রক্তকে পরিষ্কার রাখতে এবং শরীর সুস্থ রাখতে তুলসী পাতা নিয়মিত সেবন করা উচিত। এছাড়াও আরো তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। 

চুলকানি প্রতিরোধে তুলসী পাতা 

গরমের দিনে অনেক মানুষ চুলকানির সমস্যায় পড়েন। তাই চুলকানির হাত থেকে রক্ষা পেতে আপনারা প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন  তুলসী পাতা।তুলসী পাতাতে রয়েছে অসংখ্য ঔষধী গুনাগুন। যা আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন ভাইরাসকে বের করে দিতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দেয়। 

তাই আপনারা যদি চুলকানির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে তুলসী পাতার সাথে অল্প একটু লেবুর রস মিশিয়ে চুলকানির স্থানে লাগাতে পারেন। এতে খুব দ্রুত চুলকানি সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। চূলকানি প্রতিরোধ করার জন্য তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বলে বোঝানো যাবে না। 

তুলসী পাতা ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে

তুলসী পাতা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করা পাশাপাশি আমাদের শরীরের ত্বককে উজ্জ্বল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।আপনারা তুলসী পাতা ব্যবহার করে আপনার ত্বককে করতে পারবেন আরো অনেক বেশি উজ্জ্বল। এজন্য আপনাকে কয়েকটি তুলসী পাতা এবং তাতে অল্প পরিমাণ দুধ মেশাতে হবে। 

তারপরে আপনাকে সেই মিশ্রণটি আপনার মুখের অথবা ত্বকের স্থানে ২০-৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখতে পারেন। তারপরে আপনাকে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। 

তুলসী পা  মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে

তুলসিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য যা আমাদের আমাদের মুখের জীবাণুগুলোকে ধ্বংস করে এবং মুখের উন্নতিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে আপনারা যদি তুলসীর পাতার পানি গরম করে কুলি করতে পারলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে এবং মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। 

তুলসী পাতা হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে

তুলসী পাতার উপকারিতা অনেক। তুলসী পাতা প্রচুর পরিমাণে কর্মিনেটিভ বৈশিষ্ট যা আমাদের পেটের সমস্যা দূর করে। আমাদের পেট ফাঁপা, হজম না হওয়া, গ্যাসের সমস্যা দূর করতে সবচেয়ে কার্যকরি একটা উপায় হচ্ছে তুলসী। আপনারা যদি প্রতেকদিন সকালে তুলসীর পাতার পানি গরম করে খেতে পারেন তাহলে এসব সমস্যা খুব সহজেই দূর করা সম্ভব। 

এছাড়াও তুলসীর পানি পান করলে আপনার শরীরে যেসব বিষাক্ত জীবাণু রয়েছে সেগুলো জীবাণুকে বের করে আপনাকে নানারকম রোগ বালাই থেকে সুরক্ষিত রাখবে। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে তুলসী

আপনারা যদি নিয়মিত তুলসী পাতা খেতে পারেন তাহলে আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করবে এবং আপনার রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও তুলসীতে যেসব যৌগগুলি রয়েছে সেসব আমাদের সাস্থের উন্নতির পাশাপাশি আমাদের দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাবে। 

নিয়মিত তুলসী পাতা খেলে যেসব সমস্যা দূর হবে

তুলসীকে বলা হয় সকল রোগের মহৌষধ। যা আমাদের অনেক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে এবং তুলসী নানারকম ত্বকের সমস্যা দূর করে। উপরে আপনাদের বলা হয়েছে যে তুলসীর পাতা আমাদের কোন রোগের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং এটা ত্বকের কি কি উপকার করে। এতোগুলো উপকার বলার পড়েও তুলসী পাতার উপকারিতা শেষ হয় নাই ---

এছাড়াও তুলসী আমাদের শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে যার ফলে আমাদের হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট এসব রোগ দূর হয়। তুলসী আমাদের অনেক রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ওজন কমাতে তুলসী ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। 
তুলসী পাতার -উপকারিতা

তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম

সব কিছু অতিরিক্ত খাবার ফলে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তুলসীর ক্ষেত্রেও তার বিকল্প নয়। আপনারা যদি অতিরিক্ত তুলসীর পাতা খেয়ে ফেলেন তাহলে নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনারা প্রতেকদিন সকালে ৪-৫ টি তুলসীর পাতা চিবিয়ে খেতে পারলে উপকার পাবেন। তবে শুধু তুলসী পাতা না খেয়ে আপনারা তুলসীর চা খেতে পারেন 

এতে উপকার বেশী পাবেন। এছাড়াও আপনারা তুলসীর রস করে খেলে আরো বেশী উপকার পাবেন। তুলসির পাতা চিবিয়ে খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে পরিষ্কার করে নিবেন।

তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক

তুলসী পাতার উপকারিতা রয়েছে অনেক কিন্তু আমরা যদি অতিরিক্ত তুলসী খাওয়ার ফলে দেখা দিতে পারে নানাধরনের জটিলতা। তুলসীর ক্ষতিকর দিক নিচে দেয়া হলো----
  • অতিরিক্ত তুলসী খাওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট, মূত্র ও কাশির সঙ্গে রক্ত বের হতে পারে
  • যাদের ডায়াবেটিকস রয়েছে তাদের গ্লুকোজের মাত্রা কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত তুলসী সেবন করার ফলে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়
  • কাচা তুলসী পাতা খেলে দাতে দাগ হতে পারে

লেখকের শেষকথা

আজকের এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে। তুলসী পাতার বিভিন্ন উপকারিতা কীভাবে আমরা ব্যবহার করবো। তুলসী পাতা আমাদের কীভাবে কোন কোন সমস্যার ক্ষত্রে উপকার করে বিস্তারিত সব কিছু। আপনাদের যদি তুলসী পাতার উপকারিতা কোন কিছু বুঝতে কোন অসুবিধা হয় আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইউনিকমিস্ট্রির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন আমরা আপনাদের পজিটিভ কমেন্টের জন্য অপেক্ষা করছি

comment url