শিশুদের কৃমির ঔষধ কিভাবে খাওয়াবেন ?
শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানতে চাই। কেননা আমাদের দেশে কৃমির সমস্যা একটি খুবই কমন সমস্যা। এ সমস্যাটি সাধারণত বাচ্চাদের, বড়দের, এবং বয়স্কদের সকলের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
কৃমির সমস্যাটি সাধারণত অপরিষ্কার এবং কিছু বদ অভ্যাসের কারণে হয়ে
থাকে। আমাদের দেশে কৃমির সমস্যার সবচেয়ে বেশি আক্রমণ হয়ে থাকে
শিশুদের উপরে। এবং এ সমস্যাটি দেখা দিলে তেমন বেশি উপসর্গ দেখা দেয়
না। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব কৃমির উপসর্গ, কৃমির
প্রতিকার, এবং কৃমির ওষুধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
পেইজ সুচিপত্র: শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা অনেকেই বিস্তারিত জানতে
চান। আমাদের দেশে কৃমির সমস্যা একটি সাধারণ সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা
হয়। এ সমস্যা শুধু শিশুদের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধ নয় এ সমস্যাটি বর্তমানে
সকল বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। সাধারণত কৃমির
সমস্যাটি হয়ে থাকে নোংরা পরিবেশ এবং অপরিষ্কার থাকার ফলে।
আপনারা যদি আপনাদের অপরিষ্কার হাতের সাহায্যে কোন কিছু খাবার গ্রহণ করে থাকেন
তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার কৃমি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়াও টয়লেট
ব্যবহার করে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত না ধুলে কৃমি হওয়ার সম্ভাবনা
থাকবে, এছাড়াও কাঁচা ফলমূল অথবা শাক সবজি ভালোভাবে পরিষ্কার না করে খেলে
কৃমির সম্ভাবনা থাকে।
এছাড়া আরো বিভিন্ন কারণে কৃমির সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে
কৃমির সমস্যাটি মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই
শিশুদের কিভাবে কৃমির হাত থেকে রক্ষা করতে হয় সেই উপায় সম্পর্কে জানতে
হবে। এছাড়াও শিশুরা কৃমির কবলে পড়লে কিভাবে শিশুদের কৃমির ওষুধ
খাওয়াবেন সে সম্পর্কে জানতে হবে।
শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
শিশুদের ক্ষেত্রে কৃমির ঔষধ খাওয়ান ো নিয়ম সম্পর্কে জানা খুবই
জরুরী। নিচে আপনাদের সঙ্গে শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর নিয়ম সম্পর্কে
আলোচনা করা হলো।
প্রথমত আপনাকে শিশুদের ক্ষেত্রে ঔষধ খাওয়ানোর পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ
করা জরুরী। কেননা শিশুদের ক্ষেত্রে ওষুধের ডোজ সঠিক পরিমাণে সেবন করা
গুরুত্বপূর্ণ। যাদের বয়স সাধারণত এক থেকে দুই বছর তাদের ক্ষেত্রে কৃমির ঔষধ
প্রদান করা হয়ে থাকে। কিন্তু যাদের বয়স দুই বছরের কম তাদের ক্ষেত্রে
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষ ঔষধ গ্রহণ করতে হবে।
সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে যাদের বয়স ১-২ বছরের কম তাদের ক্ষেত্রে তরল ঔষধ
অথবা অর্ধেক ট্যাবলেট ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ডোজ
এ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের ক্ষেত্রে কৃমির ঔষধ সাধারণত ছয়
মাস থেকে এক বছর পর পর গ্রহণ করতে হয়। এভাবে গ্রহণ করলে কৃমির হাত থেকে
রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃমির ওষুধ খালি পেটে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও
শিশুরা কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর সময় ট্যাবলেট যদি সম্পূর্ণ গিলতে
না পারে সে ক্ষেত্রে চিবিয়ে খেতে পারবে। এছাড়া আপনাকে যদি তরল ঔষধ
খাওয়ার পরামর্শ ডাক্তার দিয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে ঔষধ গ্রহণ করতে হবে।
শিশুদের ক্ষেত্রে কৃমির উপসর্গ
শিশুদের ক্ষেত্রে কৃমির উপসর্গ সম্পর্কে জানার জন্য আপনারা অনেকেই প্রতিনিয়ত
গুগলে সার্চ করে থাকেন। কিন্তু সঠিক তথ্য জানতে পারেন না। তাই
আপনাদের সঙ্গে আমরা এখন আলোচনা করব শিশুদের ক্ষেত্রে কৃমি হলে কি কি উপসর্গ
দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে পোস্টে পড়তে থাকুন।
শিশুদের ক্ষেত্রে কৃমির সমস্যা দেখা দিলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে
পারে। নিচে কৃমির উপসর্গ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত কৃমির সমস্যা দেখা দিলে পেট ব্যথার সমস্যা দেখা
দেয়। বিশেষ করে নাভির চারপাশে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়, তাছাড় াও
পেট ফাঁপা, অস্বস্তি অনুভূত হওয়া, বারবার পাতলা পায়খানা অথবা
ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা, এবং বমি বমি ভাব অনুভূত
হওয়া। এছাড়াও, শিশুদের কৃমির সমস্যা দেখা দিলে
শিশুর ওজন কমতে শুরু করে। শিশুর শরীর ধীরে ধীরে দুর্বলতা শুরু করে
এবং দুর্বলতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে অনেকদিন পর্যন্ত। কোন খাবারের প্রতি
রুচি থাকে না, কোন খাবার খেতে ইচ্ছা করে না, আবার অনেক ক্ষেত্রে
প্রচন্ড ক্ষুধা অনুভূত হতে পারে। তাছাড় াও মলদ্বারে চুলকানি
অথবা অস্বস্তি হতে পারে। চুলকানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ঘুমের সমস্যা
সৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়াও শিশুদের ক্ষেত্রে কৃমি দেখা দিলে শরীরের রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হতে
পারে। এক্ষেত্রে শিশুদের ত্বক এবং ঠোট ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও মাথা ঘোরা, দুর্বলতা অনুভূত
হওয়া, শরীরে চুলকানি বৃদ্ধি পাওয়া, এলার্জি অনুভূত
হওয়া, ইত্যাদির মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এসব উপসর্গ দেখা দিলে
দ্রুত চিকিৎসার পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
- বমি বমি ভাব অনুভূত হওয়া
- দ্রুত ওজন কমতে শুরু করা
- পেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া
- মেজাজ খিটখিটে হতে শুরু করে
- মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি অনুভূত হওয়া
- পায়খানার সাথে রক্ত পরা
- খাবারের প্রতি রুচি কমে যাওয়া
- খাবার হজম না হওয়া
কিভাবে বাচ্চারা কৃমিতে আক্রান্ত হতে পারে?
বিভিন্নভাবে বাচ্চারা কৃমিতে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখার ফলে, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ
করলে, এবং নোংরা হাতে খাবার খাওয়ার ফলে শিশুর া কৃমিতে আক্রান্ত হতে
পারে। নিচে কৃমিতে আক্রান্ত হওয়ার কিছু উপায় সম্পর্কে জানানো
হলো।
- কোন কিছু খাওয়ার পূর্বে হাত ভালোভাবে পরিষ্কার না করা
- অপরিষ্কার পানি এবং খাদ্য গ্রহণ করা
- রাস্তার দূষিত খাবার গ্রহণ করা
- বিভিন্ন সময় শিশুরা নখের ময়লা খাওয়ার ফলে এ সমস্যা দেখা দেয়
- বাথরুম করার পর ভালোভাবে হাত না ধোয়া
- সংক্রমিত ব্যক্তির স্পর্শ ে আসা
কৃমির হাত থেকে বাঁচতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করার জরুরী
কৃমির হাত থেকে বাঁচতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করার জরুরী সে সম্পর্কে জানা
আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ন। নিচে কীভাবে কৃমির হাত থেকে বাঁচতে হলে কি কি
করতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে:
- কৃমির হাত থেকে বাঁচতে সবসময় পরিষ্কার থাকা জরুরী
- কৃমির হাত থেকে বাঁচতে হাতের নখ বর করা যাবে না
- শিশুকে সবসময় খালি পায়ে রাখবেন না
- ময়লা আবর্জনা থেকে দুরে থাকতে হবে
- খাবার খাওয়ার আগে এবং পুর্বে ভালভাবে হাত ধুতে হবে
- পায়খানা করার পর সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে
৩ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
৩ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার জন্য আপনারা
অনেকেই প্রতিনিয়ত গুগলে সার্চ করে থাকেন। তাই আপনাদের সুবিধার্থে
এখন আলোচনা করা হবে তিন বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর নিয়ম
সম্পর্কে।
সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে কৃমির ঔষধ হিসেবে অ্যালবেনডাজল,
অথবা মেবেনডাজল নামক ঔষধ শিশুদের ক্ষেত্রে
কার্যকর। আপনারা শিশুদের এ ঔষধ খেতে দিতে পারবেন। তারা যদি ঔষধ গিলে
না খেতে পারে তাহলে তাদের চিবিয়ে ঔষধ খাওয়াতে হবে। ঔষধ খাওয়ার পূর্বে
অবশ্যই কোন কিছু খেতে হবে, খালি পেটে ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না।
কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর সাধারণত কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে
পারে।
- হালকা পেট ব্যথা
- বমি বমি ভাব
- পাতলা পায়খানা
- ক্ষুধা কমে যাওয়া
বড়দের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
বড়দের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী। বড়দের
ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে অথবা অপরিষ্কার খাবার গ্রহণ করার ফলে
কৃমির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কৃমির সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য ছয়
মাস পর অথবা এক বছর পর কৃমির ঔষধ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। নিচে বড়দের
কৃমির ওষুধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানানো হলো।
বড়দের ক্ষেত্রে কৃমির ঔষধ হিসেবে অ্যালবেনডাজল, অথবা মেবেনডাজল
প্রদান করা হয়ে থাকে। এই ঔষধগুলো সাধারণত ৬ মাস অথবা এক বছর এর মধ্যে
একটি অথবা একবার গ্রহণ করলেই কৃমির সমস্যা থাকার সম্ভাবনা কমে
যায়। আপনারা কৃমির হাত থেকে বাঁচতে যেকোনো সময় খাবার খাওয়ার পর
ঔষধ খেতে পারবেন।
খালি পেটে ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। আপনারা কৃমির ওষুধ চিবিয়ে
অথবা গিলে খেতে পারবেন। কৃমির ঔষধ গ্রহণ করার পরে কিছু পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যার ফলে অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন। নিচে
কৃমির ওষুধ গ্রহণ করার ফলে কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তা আপনাদের
সঙ্গে আলোচনা করা হলো :
- পেট ব্যথা
- বমি বমি ভাব
- অস্বস্তি অনুভূত হওয়া
- ক্ষুধা কমে যাওয়া
- পাতলা পায়খানা
১ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
১ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এ বছরের বাচ্চাদের কৃমির সম্ভাবনা অনেক বেশি
থাকে। এক বছরের বাচ্চার জন্য
সাধারণত অ্যালবেনডাজল, অথবা মেবেনডাজল ঔষধ প্রদান করা
হয়ে থাকে। এবছরের বাচ্চাদের জন্য সাধারণত সিরাপের ব্যবস্থা করা
হয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে ঔষধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাপ অনুযায়ী ঔষধ
খাওয়ানো গুরুত্বপূর্ণ। যদি ট্যাবলেট শিশুকে খাওয়ানোর জন্য দেয়া হয়
তাহলে সেটি গুঁড়ো করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারবেন।
শেষ মন্তব্য: শিশুদের কৃমির ওষুধ খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক, আজকের পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে শিশুদের কৃমির
ঔষধ খাওয়ানোর নিয়ম সম্পর্কে। আশা করা যায় পোস্টটি আপনাদের উপকারে
আসবে।
ইউনিকমিস্ট্রির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন আমরা আপনাদের পজিটিভ কমেন্টের জন্য অপেক্ষা করছি
comment url